মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন

করোনা মোকাবিলায় সরকার কাজের কাজ কিছুই করেনি : মির্জা ফখরুল

করোনা মোকাবিলায় সরকার কাজের কাজ কিছুই করেনি : মির্জা ফখরুল

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা প্রতিরোধে সরকার কাজের কাজ কিছুই করেনি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ আজ করোনা ভাইরাসের শিকার। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী অন্তত: ৩ জন নাগরিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সনাক্ত হয়েছেন। সোমবারও বিদেশ আসা আরো তিনজন বাংলাদেশীকে ভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা এবং দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠান গত বেশ কিছু দিন ধরে এই সমস্যার সম্ভাবনার কথা বার বার বলার পরেও সরকার শুধু জনগণকে আশ্বস্তই করেছে- কাজের কাজ যে কিছু করেনি। মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত রোগী এবং সম্ভাব্য আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা এবং ভাইরাসের প্রকোপ যাতে না বাড়ে তার জন্য সতর্কতা ও প্রতিরোধ মূলক যাবতীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতা জনগণ কখনো ক্ষমা করবে না। কারণ, জনগণ ৭৪ এর মত আরেকবার গণমৃত্যুর শিকার হতে চায় না।

করোনা নিয়ে সরকার যে কোনো কাজ করছে না তার সমালোচনায় তিনি বলেন, তার প্রমাণ হলো ইতালী থেকে ঢাকায় আসা ২ ভাইয়ের রোগ বিমানবন্দরে সনাক্ত হয়নি। দেশের ফেরার ৪ দিন পর যখন তাদের অবস্থার অবনতি ঘটে, তারাই চিকিৎসায় উদ্যোগী হয়েছেন তখন সরকার তাদের হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে তাদের একজনের স্ত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছিল তাদের তৎক্ষণাৎ কোয়ারেন্টাইনে না নেয়া সরকারের আরেকটি ব্যর্থতা। ৩ দিন পর মাত্র সোমবার এমন ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়ার কথা জানা গেল। যে ফ্লাইটে তারা ঢাকা এসেছেন সেই ফ্লাইটের অন্যান্য যাত্রীরা, বিশেষ করে যারা কাছাকাছি বসেছিলেন, দীর্ঘ ভ্রমণকালে তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে জনসচেতনতা নিশ্চিত করার জন্য মিডিয়াসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে যেমন তড়িৎ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল তাও নেয়া হয়নি। মুজিব বর্ষ পালনের ডামাডোলে জনস্বার্থ অবহেলা করে সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে প্রাক-প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল- তাও নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন বাড়বে জানা সত্ত্বেও তা যথেষ্ট পরিমাণে আমদানী কিম্বা উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় রোববার সন্ধ্যার মধ্যেই বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ৪/৫টাকার মাস্ক ৫০/৬০ টাকায় বিক্র হয়েছে এবং সন্ধ্যার পর বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি। ফলে লাখো মানুষ বিনা মাস্কে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারে জীবিকার তাগিদে জনবহুল স্থানে চলাচল করে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন পর্যন্ত সামান্য যে কয়টি হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর মান এবং আক্রান্তদের সুচিকিৎসা দেয়ার সামর্থ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ঔষধ, যন্ত্রপাতি, ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়ার জরুরী দায়িত্ব সরকার পালন করতে পারেনি। ফলে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়লে নিশ্চিতই দেশবাসী গণহারে অকাল মৃত্যুর শিকার হতে পারেন।

কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের গণমানুষের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিনা অপরাধে অনির্বাচিত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ২ বছরেরও বেশী সময় ধরে কারাগারে আবদ্ধ রয়েছেন। তিনি দারুণভাবে অসুস্থ এবং সুচিকিৎসার অভাবে ও দীর্ঘদিন বন্দী থাকার কারণে তার অসুস্থতা বেড়েই চলেছে। দেশের প্রচলিত আইনে তার চেয়েও কম বয়সী ও কম অসুস্থ এবং বেশী সাজাপ্রাপ্ত সরকারি দলের নেতারা জামিনে মুক্তি পেয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছে, কিন্তু দেশনেত্রীকে প্রাপ্য জামিন দেয়া হচ্ছে না। তিনি প্রাপ্য সুবিচার থেকে বঞ্চিত। অন্তত: সুচিকিৎসার জন্য হলেও অতিদ্রুত তার মুক্তির জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে তার পরিবারের পক্ষ থেকেও সুচিকিৎসার জন্য দেশনেত্রীর মুক্তির আবেদন করা হয়েছে।

দেশবাসী আশা করে যে, তাদের সেই আবেদন গৃহীত হবে এবং দেশনেত্রীর মত একজন বিশিষ্ট নাগরিক বিনা চিকিৎসায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

মির্জা ফখরুল জানান, আগামীকাল (বুধবার) দেশের সকল মহানগর ও জেলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু মুক্তির দাবিতে আমরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটায় জনসমাবেশে আগতগণ যাতে ভাইরাসের ঝুঁকিতে না পড়েন সে জন্য বুধবারের সেই কর্মসূচী আমরা আপাতত: স্থগিত ঘোষণা করছি। আমরা ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের আশু আরোগ্য কামনা করছি এবং এই রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য পরম করুনাময় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানাচ্ছি। একইসাথে আমরা দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সমূহের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এবং দেশবাসীকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান ও এই রোগ যাতে আর না ছড়ায় সে লক্ষ্যে জনসচেতনামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার আহ্বান জানাচ্ছি। দুঃস্থ রোগীদের সুচিকিৎসায় সহায়তা দান এবং রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সরঞ্জাম নিয়ে জনগণের পাশে থাকার জন্যও আমরা সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমুখ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877